সারাদেশ

ডেঙ্গু প্রতিরোধে মোশাররফ চেয়ারম্যানের সচেতনমূলক বিজ্ঞপ্তি

ডেঙ্গু জ্বরকে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি ডেঙ্গুতে মৃত্যু ভাতিজিকে স্মরণে সচেতন বার্তা দিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকালে এক বিবৃতিতে ভাতিজি আনিশা তাসনিম জান্নাতের মনের কথা তুলে ধরে মোশাররফ চেয়ারম্যান এ সচেতনমূলক বার্তা দেন।

ওই বার্তায় তিনি জানান, আমার নামঃ আনিশা তাসনিম জান্নাত, আমার বয়স ১০ বছর, আমি ৫ম শ্রেণিতে পড়ি। এখন আর পড়ি না ২৩/০৭/২৩ইং রোজ রবিবার পর্যন্ত স্কুলে গিয়েছি। এখন আর যাওয়া হবে না, স্কুলের বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে, দেখতে ইচ্ছে করে কিন্তু আর দেখতে পারবো না কারণ এখন আমি আল্লাহর কাছে চলে গেছি। আমার জন্য তোমরা সবাই দোয়া করো । আল্লাহ্ যেন আমাকে জান্নাতের সবচেয়ে ভালো জায়গায় স্থান করে দেন। ২৪/০৭/২৩ইং আমার পাতলা- পায়খানা ছিল, ২৫/০৭/২৩ইং ও ২৬/০৭/২৩ইং আমার জ্বর ছিল । তিন দিন পর আব্বু আমাকে ডাক্তার এর কাছে রক্ত পরীক্ষা করতে নিয়ে গেল । আমার আব্বু বড় কাকুকে তোমারা হয়তো অনেকে চেনো, আমার আব্বুর নামঃ আলহাজ্ব বাবুল ওমর (বাবু) তিনি সোনারগাঁ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান, আর বড় কাকুর নামঃ মোশাররফ ওমর, তিনি কাচপুর, ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান ।

রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে আমার ডেঙ্গু ধরা পড়লো।আমি আমার বাবা মায়ের অনেক আদরের মেয়ে ছিলাম। দাদি, বড় চাচি, মেজো চাচি, আমার চাচাতো ভাই-বোনদের আমি সবার ছোট বলে পরিবারের সবাই আমাকে অনেক বেশি আদর করতো। আমার আব্বু, বড় কাকু খুব ব্যস্ত থাকেন, আমাকে সময় দেওয়ার বা ডাক্তার দেখানোর এতো সময় তাদের কোথায়? যখন সময় হলো তখন আমার শরীর খুব খারাপ, আব্বু বুঝতে পারেন নাই। আপনারা দূর থেকে দেখে বুঝতে পারবেন না, আর আমিও বুঝাতে পারিনি, আমি তো খুব ছোট কীভাবে আপনাদের বুঝাবো, আমার কি যে কষ্ট হচ্ছে । আমার দুচোখে যখন রক্ত জমাট হয় তখন আব্বু ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করলো। তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, তার উপর হাসপাতাল ও ডাক্তারদের বড় ধরনের অবহেলার মধ্যে দুই দিন চলে গেল । আমার হাত ব্যাথা, পা ব্যাথা, কখনো পেটে ব্যাথা, কখোনো মাথা ব্যাথা করে কি যে কষ্ট, আম্মু বিষয়টাকে গুরুত্ব দিলেও আব্বু বিষয়টাকে গুরুত্ব তেমন দেয়নি। ল্যাবএইড হাসপাতালে আমাকে চিকিৎসা দেওয়ার মত “তেমন যন্ত্রপাতি ও নাই, আব্বু আমার কষ্ট কে গুরুত্ব না দিয়ে বড় হাসপাতাল দেখে তাদের গুরুত্ব দেয়, যখন আমি চিৎকার করতে থাকি ডেঙ্গু আমার হার্ট, ব্রেন, লিভার, কিডনি তে আক্রমন করে আমার প্রেসার কমে যেতে শুরু করে ।

আমার চিৎকারে আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে আসছে, তখন আব্বু কাকু বুঝতে পাড়ছিল আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তখন আমি দেখেছি আমার আব্বুর ও কাকুদের কান্না, তাদের কি কষ্ট । আমাকে বাঁচানোর কি যে চেষ্টা করেছেন তারা। আমার আব্বু, কাকুদের কান্নায় মানুষ কেঁদেছে, আমি দেখেছি, আমাকে আরো ভালো চিকিৎসার জন্য রাত তিনটায় নেওয়া হয় ইউনাইটেড হাসপাতালে।

সেখানে আমাকে ভর্তি করা হয় ডাক্তার দেখে বলে আপনার মেয়ের অবস্থা ভালো না । আমার আব্বু, কাকু ও আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের ফ্লোর ভিজে গেছে । শত শত মানুষ তাদের কান্না দেখেছে, আমার জন্য সবাই দোয়া করছে, আমার বড় কাকু আব্বু অনেক টাকা হাসপাতালে নিয়ে গেছে, ডাক্তার এর হাতে পায়ে ধরেছে, আর বলেছে টাকা নিয়ে যাও আমাদের জান্নাত কে বাঁচাও, ডাক্তার অনেক চেষ্টা করেছে, আমার জন্য তাদের চোখের পানি পড়তে আমি দেখেছি । ইউনাইটেড হাসপাতালের অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে । ডাক্তারদের এতো পরিশ্রম, আব্বু কাকুদের এতো টাকা, এতো কান্না কোনো কাজেই আসে নাই । তাই ০২/০৮/২৩ইং রোজ বুধবার বিকাল ৫.০০টায় আল্লাহ্ আমাকে কবুল করেছে তাই আমি আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছি। আজ ০৩/০৮/২৩ইং রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে আমার জানাজা হয়েছে। জানাজায় অনেক লোক অংশগ্রহণ করেছে।

আমার বড় কাকুর কান্না দেখে সবাই কেঁদেছে । কাঁদতে কাঁদতে কিছু কথা বলেছে, আমি ও সেটাই তোমাদের বলি, ডেঙ্গু কোন সাধারণ রোগ বা ভাইরাস নয় এর লক্ষণ গুলো সবাই বোঝেনা যা আমার আব্বুও বোঝো নাই । যেমনঃ- জ্বর, পাতলা পায়খানা, শরীর ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা ইত্যাদি, আমার কাকু বলছে জ্বর হঠাৎ করে আসলো আবার ১২-১৪ ঘন্টা পড় ভালো হয়ে গেছে । এই রকম জ্বরকে অবহেলা না করতে দেশবাসীকে বলেছে । সবাই যেন তাড়াতাড়ি করে ডাক্তার এর কাছে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে, ভালো ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হয় । কোন শিশু বাচ্চাকে যেন অবহেলা না করা হয় । কারণ তারা তো আর ভালো করে কথা বলতে পারে না । তারা বুঝাতে পারে না কি যে কষ্ট, এগুলো আমাকে দেখে আমার বড় কাকুর এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ বড় কাকু তোমাদের যা বলেছে তা বুঝার চেষ্টা করো সবাই সচেতন হও । আমার জন্য কেঁদোনা আমি আল্লাহর কাছে চলে এসেছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করো, আমি যেন জান্নাতবাসী হই ।

ইতি তোমাদের প্রিয় আনিশা তাসনিম জান্নাত

Back to top button