সারাদেশ

হাসপাতালে সন্তান রেখে উধাও মা-বাবা, কোলে ফিরিয়ে দিল পুলিশ

সিদ্ধিরগঞ্জে হাসপাতালের চিকিৎসার বিল পরিশোধ করতে না পেরে ১ মাসের কন্যা শিশুকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায় মা-বাবা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সিদ্ধিরগঞ্জ থানাকে জানালে মানবিক পুলিশ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে শিশুটিকে ফিরিয়ে দিলো মা-বাবার কোলে। সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশুটি নরদিংদী জেলার মনোহরপুরের রজত চন্দ্র এবং সুজাতা দম্পতির মেয়ে। চিকিৎসার বিল বেশি হওয়ায় তা পরিশোধ করতে না পেরে এক মাসের মেয়ে শিশুকে হাসপাতালে রেখে শনিবার (১২ আগস্ট) উধাও হয়ে যান মা-বাবা। এরপর থেকে শিশুটির মা-বাবার কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের শরণাপন্ন হন।

পরবর্তীতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে ওই শিশুকে মা-বাবার কোলে ফিরিয়ে দেয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিল পরিশোধ করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা।

এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক, পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।

বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, গত ২৯ জুলাই ওই শিশুটিকে তার বাবা-মা হাসপাতালে ভর্তি করান। গত ২৪ দিন ধরে শিশুটি ডা. মজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল। পরবর্তীতে বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে গেলে আমরা তাদের বিল পরিশোধ করে বাচ্চাটিকে নিয়ে যেতে বলি। কিন্তু এরপর তারা উধাও হয়ে গেলে আমরা পুলিশের শরণাপন্ন হই। আজ বিষয়টি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে সমাধান হয়েছে। পুলিশের এই মানবিক কাজের সঙ্গে আমরাও অংশীদার হতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ধন্য মনে করছে।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, গত এক মাস আগে ওই দম্পতির গ্রামের বাড়িতে শিশুটি জন্মগ্রহণ করে। তবে জন্মের পর শিশুটির হার্টের ছিদ্র সমস্যা দেখা দেয়। ফলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে তার মা-বাবা ঢাকায় নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মাতুয়াইল মা ও শিশু ইনস্টিটিউটে এনআইসিইউ না পেয়ে সাইনবোর্ডের নবজাতক হাসপাতালে ভর্তি করান।

ওসি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে এনআইসিইউতে চিকিৎসা চলতে থাকলে শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন। এর মধ্যে সব মিলিয়ে হাসপাতালের বিল দুই লাখ টাকার বেশি হলে শিশুটির মা-বাবা টাকা ম্যানেজ করে নিয়ে আসবে বলে উধাও হয়ে যান। এভাবে ছয় থেকে সাতদিন অতিবাহিত হলেও শিশুটি মা-বাবা ফেরত না আসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাদের জানায়। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল স্যারের নির্দেশে মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমাদের সাধ্যমতো বিল পরিশোধ করে শিশুটিকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেই। বর্তমানে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। এমন মানবিক কাজ করতে পেরে আমরা খুব খুশি এবং ভবিষ্যতেও পেশাগত কাজের পাশাপাশি আমরা এ ধরনের মানবিক কাজ অব্যাহত রাখবো।’

এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিশুটির মা-বাবা বলেন, ‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা কোনোভাবেই বিল পরিশোধ করতে পারছিলাম না। এর মধ্যে দুইদিন আগে শিশুটির নানি মারা যান। কোনো উপায় না পেয়ে আমরা হাসপাতাল থেকে চলে আসতে বাধ্য হই। পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি ফোন করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্বস্ত করেন। তার আশ্বাসে আমরা হাসপাতালে গেলে আমাদের শিশু সন্তানকে ফিরিয়ে দেন।

শিশুটির বাবা রজত চন্দ্র বলেন, ‘হাসপাতালের বিল পরিশোধ করার পাশাপাশি বাচ্চাকে লালন-পালন করার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আমাদের হাতে আরও কিছু টাকা দেন। তারা আমাদের যে উপকার করেছেন সেজন্য পুলিশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের কাছে আমরা চিরঋণি হয়ে থাকব।’

Back to top button