সারাদেশ

পারিবারিক কারণে ৩৫ শতাংশ আত্মহত্যা

সরকারি উৎস তথ্যের সংকট থাকলেও বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, দেশে আত্মহত্যা বাড়ছে। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী ৩৫ শতাংশ আত্মহত্যার কারণ পারিবারিক সমস্যা। এ কারণে যাঁরা আত্মহননের পথ বেছে নেন তাঁরা তুলনামূলক বয়স্ক।

চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর আবু মহসিন খানের বয়স ৫৮ বছর।

আত্মহত্যার আগে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে নিজের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নানা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

 

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত করোনাকালে একটি জরিপ করেছিল আঁচল ফাউন্ডেশন। তাতে দেখা গেছে, ওই সময় দেশে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে। তারা এই তথ্যগুলো নিয়েছে তিনটি জাতীয় দৈনিক, পুলিশ ও হাসপাতাল থেকে।

জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে তারা বলেছে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে সম্পর্কজনিত কারণে। আর্থিক কারণে আত্মহত্যার পরিমাণ ৪ শতাংশ। ১ শতাংশ আত্মহত্যা ঘটে লেখাপড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারণে। এবং সর্বশেষ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করে ৩২ শতাংশ।

ওই জরিপে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা, যা মোট আত্মহত্যার ৪৯ শতাংশ। এর পরই বেশি আত্মহত্যা করেছে পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সীরা, যা ৩৫ শতাংশ। ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ছিল ১১ শতাংশ। আর ৫ শতাংশের বয়স ছিল ৪৬ থেকে ৮০ বছর।

জরিপ মতে, বিশ্বের পুরুষ আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা বেশি হলেও বাংলাদেশে নারীরা বেশি আত্মহত্যা করে। নারী ৫৭ শতাংশ, পুরুষ ৪৩ শতাংশ। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, মূলত মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা থেকেই বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। তাই মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দরকার নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আমাদের জরিপটি করতে গিয়ে দেখেছি, করোনার কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। আর কোনো একটিকে আত্মহত্যার একক কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়নি। ’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের হাতে পুরো ২০২১ সালের আত্মহত্যার সামগ্রিক চিত্র নেই, সেহেতু এ বছর কী পরিমাণ আত্মহত্যা বেড়েছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা দেখে ধারণা করতে পারি, এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় আরো বেড়েছে। ’

মাসভিত্তিক আত্মহত্যা প্রবণতা পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি। ডিসেম্বর মাসে এই হার সবচেয়ে বেশি ছিল। এটা মোট ঘটনার ১৪.৮৫ শতাংশ বা ১৫ জন। সবচেয়ে কম ছিল এপ্রিল মাসে; ১.৯৮ শতাংশ বা দুজন।

আত্মহত্যার কারণ ও সমাধানের বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহ্জাবীন হকের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে কোনো ব্যক্তি কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে আত্মহত্যা করে না। অনেকগুলো কারণ থাকে এর পেছনে। ’

সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে ডিপ্রেশন (মানসিক অসুস্থতা) সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে ডিপ্রেশনে থাকা মানুষটাকে আমরা সহায়তা করতে পারব। একটি বিষয় খুব জরুরি, পাশে থাকা। মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির পাশে যখন কেউ থাকে, তখন তিনি স্বাভাবিক থাকেন। কিছু কথাবিনিময় হয়। তিনি আর একাকিত্ব অনুভব করেন না। এটা তাঁকে ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে।

Back to top button