রাজনীতি

জোট নিষ্ক্রিয় রেখে ঐক্যের আলোচনায় বসবে বিএনপি

সরকারবিরোধী বৃহৎ ঐক্যপ্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। এর মধ্যে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমন্বয়ে দুটি কমিটি গঠন চূড়ান্ত হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলার সময় ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিষ্ক্রিয় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

দুটি কমিটির একটির নেতৃত্বে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এই কমিটিতে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আবদুল মঈন খান। তাঁরা জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি হচ্ছে। এর সদস্য হবেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তাঁরা বাম দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, এখনই বিদ্যমান জোট না ভেঙে ঐক্যপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চান তাঁরা। তবে এ সময় জোট সক্রিয় থাকবে না। আপাতত এই ‘ফুর্মলা’য় বৃহৎ ঐক্যের আলোচনা শুরু করছে দলটি।

বস্তুত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি এককভাবে সব কর্মসূচি পালন করে আসছে। দীর্ঘদিন ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকও হয়নি।

বিএনপির ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে গণমাধ্যমের খবরে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। তবে বিদ্যমান জোট বহাল রেখে কিভাবে বৃহৎ জোট হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলন কয়েকটি জোট মিলে যুগপৎ আন্দোলন করেছিল; সেটি তাঁদের ভাবনায় থাকতে পারে।

ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপির এক নেতা জানান, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, সরকারবিরোধী সব দলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান তাঁরা। যাতে কেউ তাঁদের ঐক্যপ্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এক দফার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানুষের ভোটের অধিকারের এই আন্দোলনে ডান ও বাম দলসহ সরকারবিরোধী সব দলকে আমরা পাশে চাই। ’

দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, বিদ্যমান জোট বর্তমান আন্দোলন ও নির্বাচনে কার্যকর ভূমিকা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। দক্ষ হাতে রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে পারেনি। তাই নতুন একটি জোটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যেখানে সরকারবিরোধী সব দল, মত ও আদর্শ একসূত্রে আসবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বুধবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করব। আলোচনার মাধ্যমে বের হয়ে আসবে কিভাবে ঐক্য হবে। ’

দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের এক দফার দাবির সপক্ষে একটি রূপরেখা দেবে বিএনপি। আলোচনায় ঐকমত্যে আসা দলগুলো ওই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করবে। এরপর সব দল একমঞ্চে এসে বৃহৎ রাজনৈতিক জোট গড়ে তুলবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য বলেছেন, যুগপৎ নাকি অন্য ফর্মুলায় আন্দোলন হবে, তা আলোচনার পর চূড়ান্ত হবে।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের বিষেয় বিএনপির সংশোধনী : জোট সরকারের তিন বছরে আওয়ামী লীগ লবিস্ট নিয়োগ করে ৯ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে ভুলবশত ৯ মিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করেছেন। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিএনপি। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে দলটি।

Back to top button