রাজনীতি

গিয়াস পরিবার’কে নিয়ে ষড়যন্ত্র-বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

 

স্টাফ রিপোর্টার (Somoysokal) নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও তার পরিবারকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

শনিবার (২১ মে) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ’র ব্যানারে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া।

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে ছুরকাঘাতের ঘটনায় সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও তার পরিবারকে ঘিরে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সরকার দলীয় একজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে যোগসাজশে বিএনপির ভেতরে থাকা একটি গোষ্ঠী এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলেও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলন থেকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে ছুরিকাঘাতের ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, ‘মামুন মাহমুদুরে ওপর যে হামলা হয়েছে তা কোনো সুস্থ মস্কিষ্কের মানুষ সমর্থন করতে পারে না। যদি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হয় তাহলে আগামীতে আবারও যে কেউ এমন ঘৃণিত হামলার শিকার হতে পারেন।’

তারা বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই মামুন মাহমুদই দলের মধ্যে মূল বিভেদ সৃষ্টিকারি। তিনি প্রকাশ্যে বিভিন্ন স্থানে বলেছিলেন, যারা গিয়াসউদ্দিনের সাথে রাজনীতি করে তারা কোনো কমিটিতে স্থান পাবে না। পরবর্তীতে হয়েছেও তাই। এ নিয়ে তার প্রতি আমাদের ক্ষোভ থাকতে পারে। মতানৈক্য থাকতে পারে, প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাও থাকতে পারে। এর অর্থ এই নয়, তাকে হত্যার চেষ্টা করা হবে। যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে তা অত্যন্ত ঘৃণিত একটি কাজ। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করছি।’

লিখিত বক্তব্যে আব্দুল বারী ভূঁইয়া বলেন, ‘মামুন মাহমুদের ওই ঘটনার পরপরই জুয়েল মীর ওরফে পাগলা জুয়েল নামে একজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়। সে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। জবানবন্দির কোথাও গিয়াসউদ্দিন পরিবারের কারো নাম নেই। তারপরও একটি মহল পুলিশকে ভুলতথ্য, বিভ্রান্ত করে ঈদের আগে গিয়াসউদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালাতে বাধ্য করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় গিয়াসউদ্দিনের ছেলে গোলাম মুহাম্মদ কাউছারকে সম্পৃক্ত করার হীনচেষ্টা করা হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে ইহকাল না হোক অন্তত পরকালের কথা বিবেচনা করে হলেও সত্যের পক্ষে থাকার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। এবং তারা প্রত্যাশা করেন, তাদের নেতা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গিয়াসউদ্দিন ও তার পরিবারকে নিয়ে পুরনো ষড়যন্ত্রকারিরা আবারও সক্রিয়’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই গোষ্ঠীটি ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা প্রচার চালিয়েছিল, মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন নাকি ঢাকায় সরকার দলীয় কোন কোন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, নির্বাচন শেষে তিনি তার ছেলে কাউন্সিলর সাদরিলকে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করাবেন! সরকার দলীয় একজন এমপির হয়ে এমন প্রচারণা চালানো হয়েছিল সেসময়। গুটি কয়েক অর্থলোভি, মুখোশধারি এই প্রচার চালিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সাদরিল আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন কিনা, সেসব প্রচার আদতে সত্যি ছিল কিনা, তা আপনারাই অবগত হয়েছেন।’

বক্তব্যে আরো দাবি করা হয়েছে, ‘মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন জিয়া পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হওয়ার কারণে এক এগারোর অবৈধ সরকার তাকে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করেন। সেসময় তাকে নানাভাবেই চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে। তিনি রাজী না হওয়াতে নানা ধরণের নির্যাতনও চালানো হয়। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ কারাভোগ করতে হয়েছে তাকে। পরবর্তীতে এসব মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং তিনি স্বসম্মানে খালাসও পেয়েছেন।’

‘গিয়াসউদ্দিন একজন নির্লোভ, নিরহংকারি, সজ্জন ব্যক্তি’ উল্লেখ করে বারী ভূঁইয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘তাকে কেন্দ্র করে যে ষড়যন্ত্র অতীতে হয়েছিল তা এখনও চলমান রয়েছে। আমরা মনে করি, রাজনীতিতে একজন পরিপক্ক, দক্ষ সংগঠক গিয়াসউদ্দিন। তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এই চক্রান্তকারিরা যেমন নিজ দলের তেমনি তাদের সহযোগিরা অন্য দলের। তাদের সকলের লক্ষ্য, নিজেদের পথ পরিষ্কার করার জন্য গিয়াসউদ্দিনকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা।’

বারী ভূঁইয়া বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর যাবৎ আমাদের প্রিয় নেতা, সজ্জন ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও তার পরিবারকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিগত ২০০৮ সালের পর থেকে অদ্যবধি জেলার যেখানেই কোনো ঘটনা ঘটুক না কেন, সেসব ঘটনায় তাকেসহ তার পরিবারকে আসামি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত আমাদের নেতা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কম করে হলেও অর্ধশত মামলা দেওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক। এসব মামলায় শুধু যে তাকেই আসামি করা হচ্ছে তা নয়, তার সন্তানদেরকেও রেহায় দেওয়া হয়নি।’

‘ষড়যন্ত্রমূলক মামলার কারণে গত বছরের ১৪ জুলাই মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলেও প্রিয়তমা স্ত্রীর জানাজা এবং দাফনে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। তার পাশাপাশি তার পুত্র কাউন্সিলর গোলাম মুহাম্মদ সাদরিলও মায়ের জানাজা এবং দাফনে অংশ নিতে পারেনি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক, মর্মাহত একটি ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলন। বারী ভূঁইয়া বলেন, ‘এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি নারায়ণগঞ্জে অন্য কোনো রাজনীতিবীদের জীবনে হোক সেটি আমাদের কাম্য নয়।’

তারা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উদ্ধৃতি টেনে বলেন, ‘সে নির্বাচনে শাহ্ আলমকে দল নমিনেশন দিয়েছিলেন। তিনি শামীম ওসমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে তা প্রত্যাহার করেছেন। পরে নমিনেশন দেওয়া হয় মনির হোসাইন কাশেমীকে। যিনি ভোটের মাঠ ফাঁকা রেখে পালিয়ে যান। সে নির্বাচনে যদি গিয়াসউদ্দিন প্রার্থী থাকতেন তাহলে ভোটের মাঠের চিত্র ভিন্ন হতো তা আপনারাও জানেন।’ সরকার দলীয় একটি গোষ্ঠীর সাথে সমন্বয় করে দলের ভেতরে থাকা গোষ্ঠীটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সে নির্বাচনে গিয়াসউদ্দিনকে মনোনয়ন বঞ্চিত করেছিল বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা দল কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন মোল্লা, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল হালিম জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাজির আহম্মেদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক এস এম আসলাম, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খোন্দকার মনিরুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা তাঁতী দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন, কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খন্দকার শিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম রতন, জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী শহিদুল্লাহ, সিদ্ধিরগঞ্জ ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন, ফতুল্লা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, ফতুল্লা থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ আহম্মেদ প্রমুখ।

 

 

Back to top button