ইউক্রেনের সংকটকে কিভাবে দেখছে মুসলমানরা
ইউক্রেন নিয়ে ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার ‘শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর’ সমাধান হবে বলেই আশা করছে সে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়। তুরস্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সির কাছে এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন পূর্ব ইউক্রেনের কোস্তিয়ানটিনিভকা শহরের মুসলিমরা। যদিও ২০১৪ সালে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে ডানবাস অঞ্চলের এই শিল্প নগরীটির পতন ঘটেছিল। কিন্তু পরে ইউক্রেন সেনাবাহিনী তার নিয়ন্ত্রণ উদ্ধার করে।
নওমুসলিম ভিটালি করিতাস্কির জন্ম ইউক্রেনে এবং দীর্ঘদিন কোস্তিয়ানটিনিভকা শহরে বাস করছেন। তিনি মনে করেন, ২০১৪ সালের পরিস্থিতি ছিল ভীতিকর এবং সংঘাতের সময়গুলোতে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা নিয়মিত হুমকির মুখোমুখি হতো। বহু বছর ধরে আমরা এসবের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা গুলি ও যুদ্ধ সব দেখেছি। অবশ্য আমরা শান্তি ও শুভ সমাপ্তি চাই। দেশের পরিস্থিতি আগের মতো হয়ে যাক। যখন কোনো সমস্যা ছিল না এবং মানুষ আরো ভালোভাবে জীবনযাপন করত। আল্লাহর ইচ্ছায় সব কিছু ভালো ভালোই শেষ হবে এবং কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
আজারবাইজানি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী আভাজ সিরিলিয়েভ ৩০ বছর ধরে ইউক্রেনে বসবাস করেন। তিনি বলেন, এক দশক আগে যখন কোস্তিয়ানটিনিভকা শহরে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়, সে সময়ের তুলনায় মুসলিমদের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। সিরিলিয়েভ শহরের ‘দ্য বালাগ অ্যাসোসিয়েশন অব মুসলিম’-এর প্রধান। তাঁর তথ্য মতে, শহরে প্রায় এক হাজার মুসলিম বসবাস করে এবং তাদের সংগঠনের সঙ্গে ৬০টি পরিবার যুক্ত আছে। চলমান সংকট কিভাবে শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ আছে সিরিলিয়েভের। কেননা তিনি নিশ্চিত নন, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান সংকটের সমাধান কিভাবে হবে। আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও প্রতিটি মানুষের জীবনকেই প্রভাবিত করে। তা প্রভাবিত করে অর্থনৈতিকভাবে, আর্থিকভাবে, কর্মসংস্থান ও মানুষের জীবনোপকরণের বিবেচনায়। তাঁর দাবি, শহরের অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান ও আন্তরিকতার।
৬৬ বছর বয়সী আবদুল্লাহ তৈয়বভও কোস্তিয়ানটিনিভকা শহরের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো ইউক্রেনিয়ান বা রাশিয়ান তাঁর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেনি। ’ স্থানীয় জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। ‘প্রতিবেশী হিসেবে আমরা পরস্পরের প্রতি সুসম্পর্ক রাখি। আমরা পরস্পরের প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করি। ’ তৈয়বভের পূর্ব পুরুষরা রাশিয়ার দাগেস্তান অঞ্চলে বসবাস করলেও তিনি প্রায় পাঁচ দশক ধরে ইউক্রেনে বসবাস করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, আল্লাহর অনুগ্রহে কোনো কিছুই হবে না। কোনো কিছু হোক সেটা আমরা চাই না। অবশ্যই আমরা সংঘাত এড়িয়ে যেতে পারব। আমি মনে করি, প্রতিটি সাধারণ মানুষই শান্তি চায়। বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়। শান্তি ও কল্যাণই আমাদের মূল প্রত্যাশা। ’
আনাদুলু এজেন্সি অবলম্বনে