এমপির শাসনের ক্ষোভ ঝাড়লেন রোগীর ওপর
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে ডাক্তার, নার্স ও দায়িত্বে থাকা কাউকে না পেয়ে স্থানীয় এমপি ফোন করে শাসন করায় রোগীর ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা হকসহ তিন কর্মরত চিকিৎসক।
গত সোমবার রাত ১১টায় চিকিৎসাধীন স্থানীয় এক সাংবাদিককে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে এমন চিত্র দেখে চিকিৎসকদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন। পরে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে ডেকে হাসপাতালে সরেজমিন চিত্র দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।
পরে গতকাল মঙ্গলবার ওই চিকিৎসাধীন সাংবাদিকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এছাড়াও ওই রোগীকে ১০-১২ হাজার টাকা মূল্যের পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রদান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার সোনারগাঁ সংবাদদাতা ও জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মো. নাসিরউদ্দিন পেটে ব্যথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ বিভাগে ভর্তি হন। পরে শুক্রবার বিকেলে তিনি নতুন ভবনের ৩১০ নং কক্ষে কেবিনে ভর্তি হন। গত কয়েকদিনে তাকে দু’ দফায় কয়েকটি পরীক্ষা করান। সেই পরীক্ষার সকল প্রকার রিপোর্ট গতকাল মঙ্গলবার রাতে দেওয়ার কথা রয়েছে। ওই সাংবাদিক মো. নাসিরউদ্দিনকে সোমবার রাত ১১টায় নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা দেখতে যান। সেখানে কোন ডাক্তার, নার্স ও নাইট গার্ড কাউকে দেখতে পাননি। তাছাড়া ওই সময়ে হাসপাতালে বিদ্যুৎ থাকার পরও অন্ধকারাচ্ছান্ন ছিল। পরবর্তীতে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসককে ডেকে কাউকে না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চান। এবিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা হক, আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. মোশারফ হোসেন, ডা.নাহিদ চিকিৎসাধীন ওই সাংবাদিকের কক্ষে ঢুকে তাকে উল্টো ক্ষোভ ঝেড়েছেন। ওই সাংবাদিককে বিভিন্নভাবে হয়রানীমূলক কথা বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সকল প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরও তাকে আরো দামী দামী পরীক্ষা করানোর স্লীপ ধরিয়ে দেন।
চিকিৎসাধীন সাংবাদিক নাসিরউদ্দিন বলেন, প্রস্রাবের প্রদাহ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এমপি সাহেব হাসপাতালে দেখতে আসার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রুক্ষ আচরণ করে যাচ্ছে। কখনো আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড ও ১০/১২ হাজার টাকা মূল্যের পরীক্ষা স্লিপ ধরিয়ে দিয়েছেন। এ হাসপাতালে আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের কেমন আচরণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী জানান, এখানে প্রায় ২০-২২বছর ধরে চাকুরী করে আসছি। অনেক টিএইচও দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমান টিএইচও মতো খারাপ আচরণ কেউ করেন নাই। তিনি রোগীসহ সকলের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকেন।
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা হক বলেন, বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝি। আশা করি সামাধান হয়ে যাবে। এমপি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসায় সকলেই সর্তক হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, ডাক্তার নার্স না থাকার বিষয়টি সত্য নয়। তবে রোগীর সঙ্গে ক্ষোভ ঝাড়লে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, রোগীর সঙ্গে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এমন কিছু হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে।