নাম দেবে না আট দল
বিএনপিসহ রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেওয়া আটটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে সার্চ কমিটিতে কোনো নাম দেবে না। তাদের মতে, এটা সম্পূর্ণ অর্থহীন একটা বিষয়। এসব করে দেশে কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন হবে না। কারণ রাষ্ট্রপতির সংলাপ থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইন প্রণয়ন ও সার্চ কমিটি গঠনসহ পুরো প্রক্রিয়াটিই হলো অগ্রহণযোগ্য। জনগণের কাছে এটি ফের ‘ভোট চুরির একটি নতুন প্রকল্প’ আখ্যা দিয়ে আট দলের নেতারা বলেছেন, সার্চ কমিটিতে ইসির নামের তালিকা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এ আওয়ামী লীগের অধীনে বাংলাদেশে আর কখনোই কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রপতির সংলাপে না যাওয়া দলগুলোর মধ্যে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ছাড়াও রয়েছে- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), মুসলীম লীগ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। তারা কেউ এ সার্চ কমিটিতে কোনো নাম দেবে না বলে জানিয়েছে। জানা যায়, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনার পদে নাম প্রস্তাব করতে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি সম্পূর্ণ অর্থহীন। নবগঠিত সার্চ কমিটিকে তিনি ‘ওল্ড ওয়াইন ইন দ্য নিউ বোটল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিগত দুটি নির্বাচনের আগে যেভাবে ইসি গঠন করা হয়েছে, একইভাবে আবারও একটা খোলস লাগিয়ে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাইছে। লোক দেখানো সংলাপ করে দেখাচ্ছে যে, এই যে দেখুন, আমরা সবার মতামত নিয়ে কী সুন্দরভাবে এ কমিশন গঠন করছি। তারপর দেখা যাবে যে, সেই হুদার (কে এম নুরুল হুদা) মতো লোকজনকেই তারা নির্বাচিত করবে। তাছাড়া এ সার্চ কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একজন আছেন যিনি আওয়ামী লীগের নমিনেশন পর্যন্তও চেয়েছিলেন। কাজেই আমাদের কাছে সার্চ কমিটির কোনো মূল্য নেই। তাদের কাছে নাম দেওয়াটা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া দেশে কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব নয়। ইসি গঠন নিয়ে এগুলো যা হচ্ছে, সবই ‘নতুন বোতলে পুরাতন মদের’ মতোই। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য যা যা করেছিল, এবারও সেগুলোই করছে। কাজেই এগুলো সবই অর্থহীন।
এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ সরকার সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশে এখন আর এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, যা নিরপেক্ষ। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তারা আওয়ামী সংগঠনে পরিণত করেছে, যে কারণে আমরা জাতীয় সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছি। জাতীয় সরকার এসেই এসব দলীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করবে। তবেই দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব হবে। ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ থেকে শুরু করে সার্চ কমিটি গঠন পর্যন্ত সবকিছুকেই সময়ের অপচয় এবং অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকেন্দ্রিক এবং সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক যে সংকট বিদ্যমান, এভাবে তার সমাধান হবে না। সমাধানের কোনো পথও বের হবে না। এবারও এ সংলাপ এবং পরবর্তীতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে অকার্যকর, মেরুদ হীন এবং সরকারের অনুগতদের নিয়েই ইসি গঠন করা হবে, যা দেশের বিদ্যমান সামগ্রিক সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে। বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীদের কারও পরামর্শ না নিয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসি আইন ও সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের ওপর জনগণের আস্থা নেই। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও নিজেদের মধ্যে চর দখলের মতো হানাহানি হয়েছে। কাজেই সব শ্রেণির মানুষকে যুক্ত না করে যত ভালো মানুষকেই বসানো হোক না কেন, তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সার্চ কমিটির এ প্রক্রিয়া সরকারের প্রতি অনাস্থা আরও বাড়াবে। আর জনগণের কাছে যা গ্রহণযোগ্য নয় তার সঙ্গে আমরাও নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইলেকশন কমিশন গঠনে সরকার যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে তা অগ্রহণযোগ্য। নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটি জনগণের আশা পূরণ করতে পারবে না। সার্চ কমিটিতে যারা রয়েছেন তারা নিরপেক্ষ নন। তাই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সার্চ কমিটিতে নাম পাঠাবে না। চলমান সংকট দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে একটি কার্যকর সংলাপ এখন সময়ের অনিবার্য দাবি।