অপরাধ

জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার( Somoysokal) পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের অফিস সহকারী এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওই কোম্পানি অফিস সহকারী (রেজি. নং-৩৩৫০) মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলাম বিভিন্ন অনিয়মের জড়িত এমন অভিযোগ করেছেন শেয়ারহোল্ডাররা। তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, বিটুমিন বাণিজ্য এবং ফার্নেশ অয়েল বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক এখন। তার বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড়ের শেয়ারহোল্ডার মোহাম্মদ রহমত আলী আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন সেক্টরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এদিকে মমতাজুল ইসলামের বিভিন্ন অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং শ্রমিক কর্মচারীদের কাছে হতে বদলির ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক টাকা আত্মসাৎ এর কারণে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সিবিএ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।

শেয়ারহোল্ডার মোহাম্মদ রহমত আলীর অভিযোগে জানা গেছে, মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলাম ১৯৯২ সালে শিবির ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে নিয়োগ পান। ১৯৯০-৯১ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে ইসলামী ছাত্র শিবির সংগঠনের ভিপি পদের প্রার্থী ছিলেন। মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলাম ভিপি পদ দখল করার জন্য চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের মেধাবী ছাত্রলীগ নেতা আবদুল কুদ্দসকে হত্যা করে এবং এই হত্যার প্রধান আসামি ছিলেন শিবির ক্যাডার মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলাম। চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানায় তৎসমূহের রেকর্ডপত্র অনুসন্ধানে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

জানা গেছে, বিএনপি সরকারের (১৯৯১-৯৬) আমলে চট্টগ্রামের মন্ত্রী মীর নাছিরের সহযোগিতায় আবদুল কুদ্দুস হত্যা মামলার ধামাচাপা দিয়ে তার বড় ভাই জামায়াত নেতা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (যিনি ১৯৯৬ সালে পটিয়া ১২নং আসন হতে জামায়াতের এমপি প্রার্থী)। এর মাধ্যমে চাকরি নিয়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের খুলনা অফিসে আত্মগোপনে ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম গুপ্তখাল পতেঙ্গায় ব্যারেল ফিলিং বিভাগে বদলি নিয়ে আসে। ১৯৯৭ সালে পদ্মা অয়েল পদ্মা কোম্পানি লিমিটেড এর গুপ্তখাল পতেঙ্গায় ব্যারেল ফিলিং বিভাগে আগুন ধরে যায় এবং ঘটনারস্থলে তিনজন লোক প্রাণ হারায়। উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করেন এবং তার আপন ছোট ভাই জামায়াত নেতা মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলামকে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের দিনাজপুর অফিসে বদলি করা হয়। ২০০৯ সালে ১৭ ডিসেম্বর পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কর্তৃপক্ষ জামায়াত নেতা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য পুনরায় চাকরিচ্যুত করে ।

জামায়াত-বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে জামায়াত নেতা এমপি শাহজাহান চৌধুরীর মাধ্যমে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলাম দিনাজপুর হতে আবার চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসেন। ২০০৫ সালে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী ও গডফাদার সাকা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন সময়ে চাকরিচ্যুত জামায়াত নেতা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে (যিনি ১৯৯৬ সালে পটিয়া ১২নং আসন হইতে জামায়াতের এমপি প্রার্থী)। চাকরিতে পুনঃবহালের জন্য পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা জামায়াত নেতা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে প্রদান করতে বাধ্য করেন। ২০০৫ সাল থেকে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জামায়াত-বিএনপির বিভিন্ন মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে চার দলীয় জোট সরকারের বিদায়ের পূর্বাহ্নে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর শ্রম আইনের সমস্ত নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে একতরফা সিবিএ নির্বাচন করে অবৈধভাবে তার আপন ছোট ভাই জামায়াত নেতা মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলামকে সভাপতি পদে দায়িত্ব প্রদান করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলাম নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, বিটুমিন বাণিজ্য এবং ফার্নেশ অয়েল বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, যা দুদুকের নজরে আসে এবং এখনও মামলা বিচারাধীন রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলামের রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে জনৈক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ২০১০ সালের ৪ আগস্ট অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে ওই বছরের ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পত্রের মাধ্যমে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা সত্ত্বেও তৎকালীন দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে জনৈক শেয়ারহোল্ডার মোহাম্মদ নুরুল আবছার মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২১ মার্চ অভিযোগ প্রদান করে। অভিযোগপত্রে সচিব পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে মতামত জানতে চাইলে তা তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিষয়টি গোপন করেন। বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ মমতাজুল ইসলামের সঙ্গে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Back to top button