সারাদেশ

২০ জন নাই সোনারগাঁ আওয়ামী লীগে!

সম্মেলনের ৯ মাস পর উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি স্বাক্ষরতি ওই কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধকি নেতার বিরুদ্ধে রাতারাতি পদ বাগিয়ে আনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা ইতিমধ্যে আগত এ কমিটিকে প্রত্যা্খান করেছে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক কায়সার হাসনাত ও সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম।

তাদের অভিযোগ, জামাত, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বি-টিম হিসেবে কাজ করা বিতর্কিতদের সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটির ঘোষনা বলে দেয় সোনারগাঁ আওয়ামীলীগকে ধ্বংসের চূড়ান্ত রূপরেখা প্রকাশ করা হয়ে গেছে।এ কমিটি বিতর্কিতভাবে গঠন করা হয়েছে। ত্যাগীদের চাইতে ভোগীরাই সুবিধা পেয়েছে এ কমিটিতে। এ কমিটিকে সোনারগাঁয়ের তৃণমূল নেতারা প্রত্যাখান করেছে।

গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল স্বাক্ষরতি ৭১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষনা দেয়া হয়। এর আগে জমা দেয়া ৭১ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত কমিটির ২০ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে।

যারা বাদ পরেছেন
১.মো.শহিদুল্লাহ সরকার (প্রস্তাবিত কমিটির সহ সভাপতি), ২. বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবাদুল হক মাস্টার (প্রস্তাবিত কমিটির সহ সভাপতি) ৩.খন্দকার আমিনুল ইসলাম (প্রস্তাবিত কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক) ৪.সাইদুর রহমান মোল্লা (প্রস্তাবিত কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক) ৫.মাওলানা ইউসুফ দেওয়ান (প্রস্তাবিত কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক) ৬.নির্মল কুমার সাহা (প্রস্তাবিত কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক) ৭. রফিকুল হায়দার বাবু ( প্রস্তাবিত কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক) ৮.মো. আতাউর রহমান( প্রস্তাবিত কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক)
৯.চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১০.চেয়ারম্যান শামসুল আলম শামসু (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১১. সনজিৎ হাসনাত (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১২.আহসান হাবিব টিপু (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১৩.মো. তাজুল ইসলাম (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১৪.মোশাররফ হোসেন মেম্বার (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১৫.মোঃ আব্দুল হালিম (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১৬.মো. শামসুল আলম (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১৭.মোঃ কবির হোসেন (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১৮.অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আমির হোসেন (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ১৯.মো. রাসেল উদ্দিন রাসেল (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য) ২০. মোঃ খাইরুল আলম (প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য)।
যে ২০ জনকে নতুন যুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন
১.মোশাররফ হোসেন চেয়ারম্যান (সহ-সভাপতি) ২.নজরুল ইসলাম মনির (সহ-সভাপতি) ৩.অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মর্তুজা (সহ-সভাপতি)
৪.মাসুদ রানা মানিক (সহ-সভাপতি) ৫. বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির(আইন বিষয়ক সম্পাদক) ৬..রাসেল মাহমুদ (কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক) ৭.সালাউদ্দিন মাসুম (ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক) ৮.প্রদীপ কুমার ভৌমিক (বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক) ৯.রাসেল মাহমুদ( ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক) ১০.এডভোকেট মোখলেসুর রহমান আমির( সহ দপ্তর সম্পাদক)
১১.আলী হাসান মেহেদী (সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক) ১২.এরফান হোসেন দীপ( সদস্য) ১৩.নজরুল ইসলাম( সদস্য)
১৪.কাজী মো. মাসুম (সদস্য) ১৫.দীপক কুমার বণিক দিপু( সদস্য) ১৬.এনামুল হক বিদ্যুৎ (সদস্য) ১৭.জসীমউদ্দীন(সদস্য)
১৮. কাদির খান জয় (সদস্য) ১৯.নজরুল ইসলাম (সদস্য) ২০.শামসুজ্জামান (সদস্য)।

তৃনমূল নেতারা বলছে, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিটা কি তাহলে জেলা আওয়ামী নেতারা পরিচালনা করবেন? যদিও করেন তাহলে সোনারগাঁ পৌরসভা সম্মেলন সহ যে কোন আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে হাজী আতাউর রহমান আক্তার ও কবির হোসেন সহ বাদ পড়া ত্যাগী নেতা কর্মীরা যে বিশাল মিছিল নিয়ে হাজির হতেন এত নেতাকর্মীর সমাগম কোথা থেকে ঘটাবেন। মিছিলের শহর হিসেবে পরিচিত পিরোজপুর ইউনিয়ন ও শম্ভুপুরা ইউনিয়নকে যেভাবে কোনঠাসা করা হয়েছে তাদের ছাড়া রাজপথ কাদের নিয়ে সামলাবেন? কার স্বার্থ হাসিল করতে পিরোজপুর ইউনিয়নের পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের চূড়ান্ত কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তা কারো বোধগম্য নয়।

শম্ভুপুরার সদ্যপ্রয়াত সংগ্রামী নেতা নাছির মেম্বারের অবর্তমানে তার ছেলে রাসেলের ডাকে যে পরিমান নেতাকর্মী সমবেত করেছে সেই রাসেলকে কিভাবে শান্তনা দিবেন। সোনারগাঁয়ের প্রয়াত সংগ্রামী নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুল হাইয়ের সন্তান আহসান হাবিব টিপু, সনমান্দীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের পরিবারের কেউ কি যোগ্য ছিল না। নাকি অন্য কোন কারন আছে? পিরোজপুর ইউনিয়নের তাজুল ইসলাম, হালিম মেম্বার, মোশারফ মেম্বার দলের রাজনীতি করতে গিয়ে যে পরিমান হামলা মামলার শিকার হয়েছেন এমন নজির আর কয়টা আছে? কাঁচপুরের ওবায়দুল হক মাস্টারের মতো ত্যাগীরাও কেন পদ বঞ্চিত হলো এর উত্তর কে দিবে?

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, সোনারগাঁ আওয়ামী লীগকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করতে এই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নয়তো যাদের নাম এখানে অন্তুর্ভূক্ত করা হয়েছে, তাদের একজনকেও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন কর্মকান্ডে কখনো কেউ দেখেছে বলে আমার জানা নেই বা তারা আওয়ামী লীগের কোন সংগঠনের সাথে জড়িত আছে কি-না আমি জানিনা। যাদের দেয়া হয়েছে তাদের অনেককেই জাতীয় পার্টি আর বিএনপি-জামায়াত ঘরনা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার হাসনাত বলেছেন, আমরা উপজেলার ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাছাই করে ৭১ বিশিষ্ট সদস্যের নামের একটি তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠাই। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগ রীতিমতো আমাদের হতাশ করেছে। তারা তাদের সম্মান নিজেরাই নষ্ট করেছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।

উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, জেলা কমিটি আমাদের অভিভাবক। তাদের রদবদল করার অধিকার অবশ্যই আছে কিন্তু উপজেলা কমিটিকে কোন কিছু না জানিয়ে, কোন রকম পরামর্শ না করে, উপজেলা থেকে যে প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা পাঠানো হয়েছে সেখান থেকে ১৮ জনকে বাদ দিয়ে তাদের নিজেদের ইচ্ছায় নিজেদের মতো অরাজনৈতিক অসাংগঠনিক ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার নজির বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাসে আছে বলে আমার জানা নেই। তারা যা করেছে পুরোপুরি রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত করেছে।

 

Back to top button