সারাদেশ

মহানগর বিএনপির র‌্যালিতে প্রথম সাড়িতে যুবলীগ নেতা

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতা বনে যাওয়া মোমেন মিয়া এবার মহানগর বিএনপির র‌্যালিতে উপস্থিত হয়ে প্রথম সারিতে ব্যানার ধরে সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।

সোমবার ১ সেপ্টেম্বর সকালে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। শহরের মিশনপাড়া এলাকা থেকে র‌্যালিটি শুরু হয়ে চাষাঢ়া, ২নং রেল গেইট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালির শুরুতে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা যখন ব্যানার নিয়ে র‌্যালি শুরু করেন তখন শীর্ষ নেতাদের সাথে প্রথম সারিতেই দাঁড়িয়ে ব্যানার ধরেছে যুবলীগের ওই নেতা মোমেন মিয়া।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর মোমেনকে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এই মোমেন মিয়া আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালীন সময় মদনপুরের যুবলীগ নেতা অহিদুজ্জামানের মাধ্যমে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ রশিদের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর তিনি দীর্ঘ বছর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ভোগ করে। যুবলীগ নেতা অহিদের সাথে মিলে ব্যবসা বাণিজ্য, সাধারণ মানুষকে জুলুম নির্যাতন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর যুবলীগ নেতা অহিদ পালিয়ে গেলে মোমেন মিয়া নিজের ভোল পাল্টে বিএনপি নেতা বনে যাওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ গণমাধ্যমে উঠে আসার পর তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগে যোগদান করার বিষয়টিও স্বীকার করেছিলেন। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগে সুবিধাভোগী ফ্যাসিস্ট দোসর এই মোমেন মিয়াকে কে বা কারা বিএনপিতে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন এ নিয়ে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন মোমেন। এমনকি ৪ আগস্ট মদনপুরে ছাত্র জনতার আন্দোলন প্রতিহত করে যুবলীগ নেতা অহিদুজ্জামান অহিদের নেতৃত্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থাান নিয়ে ছিলেন মোমেন। সেই মোমেন ৫ আগস্টের পর থেকে ফের বিএনপি নেতা বনে গেছেন। নিজেকে যুবদলের ত্যাগী কর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে একটি গুজামিলের সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন।

মোমেনকে নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ রয়েছে। মোমেন বিষয়ে বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন জানান, মোমেন নামের একজন আওয়ামী লীগ করতো তার অনেক ছবি ফেসবুকে দেখেছি। সে কবে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করলো, কবে বিএনপিতে জয়েন করলো, কোন নেতা তাকে জয়েন করালো, কার নেতৃত্বে বিএনপি করে আমার জানা নাই।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের সূত্র ধরে মোমেন মিয়া বিএনপিতে যোগদান করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উনারা ফোন রিসিভ করেননি।

সম্প্রতি বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ করেছিলেন মোমেন মিয়া। তিনি বিগত বছর গুলোতে যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও এখন তিনি কিভাবে বিএনপির সদস্য ফরম পেলো। কে তাকে এসব ফরম বিতরণ করতে বললো এ নিয়েও প্রশ্ন উঠে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যারা অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদের বিএনপিতে ফেরার সুযোগ নাই। আর এখন যদি তারা সদস্য ফরম বিতরণ করেন তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবেনা। বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সেটা গ্রহণ করবেনা।

অন্যদিকে বিএনপির র‌্যালিতে প্রথম সাড়িতে দাঁড়িয়ে ব্যানার ধরার ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আল ইউসুফ খান টিপু জানান, মোমেন নামে আমি কাউকে চিনি না। এতো লোকের মাঝে কে আসছে তা আমি কিভাবে বলবো। যদি এমন কিছু প্রমাণ থাকে আমাদের জানান আমরা ব্যবস্থা নিবো।

Leave a Reply

Back to top button