সারাদেশ

ভয়ংকর বোমা হামলার বর্ণনা দিলেন বেঁচে যাওয়া শাহ নিজাম

আজ ১৬ জুন। দেশের ইতিহাসে অন্যতম বর্বরোচিত ও নৃশংস বোমা হামলার ২২ বছর। ২০০১ সালের এই দিনে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) নৃশংস বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীসহ ২০ জন নিহত হয়েছিলেন। সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন।

ভয়াবহ ওই বোমা হামলায় প্রাণে বেঁচে যান নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শাহ নিজাম। সেই ভয়াবহ স্মৃতির বর্ননা দিয়ে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দেন আওয়ামী লীগের এ নেতা।

স্ট্যাটাসে শাহ নিজাম বলেন, ১৬ ই জুন ২০০১। নির্মম এক ভয়ানক দিন। আমিও ছিলাম সেদিন ঐ পার্টি অফিসে। মাত্র ২/৩ মিনিট আগে বের হয়েছিলাম পার্টি অফিস থেকে। আমি যখন বের হচ্ছিলাম তখনি পার্টি অফিসে যাচ্ছিল বাবু চন্দন শীল। ঐদিনই শেষ নিজের পায়ে হাটতে দেখেছিলাম বাবু চন্দন শীলকে। ভীতরে আক্তার ভাই, বন্ধু বাপ্পি, মুশু, ভাসানী, সবুজ, বাচ্চু ভাই সহ সকলের সাথে দেখা হয়েছিল আমার। হঠাৎ করেই বিকট শব্দে কেপে উঠলো পার্টি অফিস সহ আশে পাশের এলাকা।গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড় দিলাম পার্টি অফিসের দিকে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল পুরো এলাকা। আমি চিৎকার করে বলতে ছিলাম শামীম ভাই শামীম ভাই। প্রথমেই দেখতে পেলাম আদমজীর জাফর ভাইকে। চোখ দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝাড়ছে। বললো নিজাম ভাই আমাকে বাচান। আমি তাকে এক বন্ধুকে দিয়ে বললাম হসপিটাল নিয়ে যাও। আমি দৌড় দিলাম সামনের দিকে। গিয়ে দেখি সারা শরীর রক্তাক্ত আমাদের শামীম ওসমান ভাইকে। তাকে রক্তাক্ত দেখে আমি জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনি বললেন নিজাম ভীতরে যাও আমার কোন নেতা কর্মী যেন মারা না যায়।সেদিন নেতার সেই কথা রাখতে পারিনি।২০ জন নেতা কর্মী বোমার আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাদের দেহ।নির্মম বোমার আঘাতে নিহত হয়েছিল তারা।

নেতার নির্দেশে ভীতরে গেলাম আর দেখতে পেলাম জামাত বিএনপির বোমা হামলার নির্মম বিবৎস চিত্র। রক্তাক্ত পিচ্ছিল পার্টি অফিস। ছিন্ন ভিন্ন মানুষের দেহ, আর বেচে থাকার আর্তনাদ ও গোংগানির শব্দ। হাত ধরে টান দিলে দেখি হাত চলে আসে,পা ধরে টানলে পা চলে আসে, জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলে দেখি নাড়ীভুঁড়ি সাথে হাত আটকে যায়। কেউ নিজের চোখে না দেখলে এটা বুঝতে কিংবা বুঝানোর ভাষা নাই। কেন এই বিবৎস বোমা হামলা, কেনো এই নির্মম হত্যাকান্ড? কি অপরাধ ছিলো তাদের? ২০ জন লোক নির্মম ভাবে নিহত হলো আহত হলো শামীম ওসমান সহ অসংখ্য নেতাকর্মী। অপরাধ টা কি ছিলো? জয় বাংলার শ্লোগান দিত ওরা? জয় বাংলার গান গেতো ওরা? গনতন্ত্রের কথা বলতো ওরা? মোটা ভাত ও মোটা কাপরের কথা বলতো ওরা? মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতো ওরা? ক্ষুদা, দারিদ্র্য মুক্ত উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতো ওরা? আর এই অপরাধে এমনি করে ভয়াবহ বোমা মেরে বিবৎস ভাবে হত্যা করতে হবে?

আজকে যারা মানবাধিকারের কথা বলছে তারা কি সেদিন অন্ধ ছিলো? আসলে মানবাধিকারের কাজ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা না,এই তকমা দিয়ে উদ্দেশ্য ও স্বার্থ হাসিল করা। আমি সেদিনের সেই বিবৎস বোমা হামলায় নিহত সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ও আহত সকলের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। হয়তো আমরা ব্যর্থ সকলের পাশে সঠিক ভাবে দাড়াতে পারিনি। এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আল্লাহ সবাইকে মাফ করুক হেফাজত করুন। বি:দ্র: আমি অল্প কথায় চেষ্টা করেছি সেদিনের নিজের চোখে দেখা ঘটনা বর্ননা করার। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

Back to top button