নারায়ণগঞ্জের শান্তি ধ্বংস করার জন্য ত্বকীকে হত্যা : মেয়র আইভী
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর ২৮ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে “নবম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা’২৩” এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ মার্চ )বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক, নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি’র সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, নাট্য ব্যাক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শওকতআরা হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ, “নবম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা ’২৩” এর আহবায়ক জাহিদুল হক দীপু ও ত্বকীকে নিয়ে রচনা লেখায় ‘ত্বকী পদক’ পাওয়া বিজয়ী মযমনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়োর শিক্ষার্থী মো: ফাহাদ হোসেন ফাহিম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর মা রওনক রেহানা।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যারা ত্বকীকে হত্যা করেছে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। সারা বাংলাদেশ জাড়ে যে কিশোর আমরা দেখতে চাই ত্বকী সেই কিশোর। কিন্তু রাষ্ট্র কিশোরকে ভয় পায়, কৈশোরকে ভয় পায়। আর তাই কিশোর গ্যাং তৈরি হলে, কিশোররা বিপথগামী হলে রাষ্ট্র নিরাপদ বোধ করে। ত্বকী এইটি তারুণ্যের প্রতীক। এইটিই আমাদের সম্ভাবনার দিক। আমরা যে শুধু ত্বকী হত্যার বিচার চাই তা নয়, আমরা ত্বকীদের জন্য নিরাপত্তা ও যোগ্য আবাসভূমি চাই। আমাদের এ লড়াইয়ে ত্বকী পথ প্রদর্শক। আমরা যে রাষ্ট্রে বাস করছি তাতে মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিচার ব্যাবস্থা স্মার্ট না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না। পাতাল রেল বা সেতু দিয়ে দেশ স্মার্ট হয় না। সুশাসন বলতে বোঝায় আইনের শাসন। আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত হচ্ছে স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা। বিচার ব্যাবস্থা স্বচ্ছ ও স্বাধীন না হলে সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়ে। ত্বকী ছিল অশেষ সম্ভাবনার প্রতীক। অঙ্কুরে এ সম্ভাবনাকে হত্যা করা হয়েছে। এমনি নির্মম হত্যার বিচার কেন এগার বছরেও হবে না?’
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না, তা সারা দেশের মানুষ বুঝতে পারে। এখানে এমন প্রভাবশালী লোকজন জড়িত, রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় যাদের বেড়ে ওঠা। নিজেদের তারা এমনই মনে করে যে রাষ্ট্রকেই মানতে চায় না। রাষ্ট্র তাদের ভয় পায় কি না জানি না।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্য ও শান্তি ধ্বংস করার জন্য ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। এ দুর্বৃত্ত শক্তি নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে চায়, যা আর কখনো সম্ভব না। ভয়ের নারায়ণগঞ্জ আজ প্রতিবাদের নারায়ণগঞ্জ হয়েছে। ত্বকী আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিখিয়েছে।’
মামুনুর রশীদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ এখন বাংলাদেশের প্রতীক। ত্বকী প্রজ্জ্বলিত আলোর প্রতীক, সম্ভাবনার প্রতীক। ত্বকীর জন্য আমরা এখন আর শোক করবো না। ত্বকীর আলোকে উদ্যাপন করবো। ত্বকীর আলো ছড়িয়ে দেবো সবখানে।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছে তরাণরা। রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে কখনো ভবিস্যৎ তৈরি হয় না। রাষ্ট্র কথা মানলে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হতো না, দেশ স্বধীনও হতো না। রাষ্ট্র কতটা নিষ্ঠুর ও বর্বর হতে পারে তার উদাহরণ ত্বকী হত্যা ও এর পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম। ত্বকী হত্যার বিচারের লড়াই আর রাষ্ট্রের চরিত্র বদলের লড়াই আজ অভিন্ন হয়ে পরেছে। এ রাষ্ট্রকে ভেতর থেকে বদলানো নাগেলে ত্বকীদের নিরাপত্তা ও বিকাশ সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে সারা দেশের বিজয়ী ৬০ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ছয়টি বিভাগে শ্রেষ্ঠ ছয়জনকে “ত্বকী পদক” প্রদান করা হয়। সেরা দশজননের লেখা ও আঁকা নিয়ে প্রকাশিত হয় স্মারক “ত্বকী”।