রাজনীতি

ইতিহাসের স্বাক্ষী হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আগামী ১৭ জুন হিরাঝীল খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন। আর এ সম্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। কেননা দীর্ঘ ১৪ বছর পর এবারই সিলেকশনের বদলে ইলেকশনের মাধ্যমে হতে যাচ্ছে রাজনীতির সূতিকাগারখ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন। এ নিয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

সূত্রমতে, গত ২২ বছরেও সম্মেলনকে ঘিরে এমন জাঁকজমক প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়নি জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের। আর এর নেপথ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন।

বিশেষ করে সম্মেলনকে সফল করতে ইতিমধ্যেই বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের দিক নির্দেশনায় গঠন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি সম্মেলন প্রস্ততি কমিটি। যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন পরচিালনা করার জন্য আপ্যায়ন কমিটি, প্রচার কমিটি, শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি সহ ৪ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। যার মধ্যে রিটার্নি অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন এড. গাজী কামরুল ইসলাম সজল, সহকারী রিটার্নিং অফিসার পদে রয়েছেন এড. কায়সার আহম্মেদ চৌধুরী টুটুল, এড. জাহিদুল ইসলাম মুক্তা ও এড. শামসুল আরিফীন। গঠিত এই পরিচালনা কমিটির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঘোষনা করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নির্বাচনী তফসীল।

ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলের মধ্যে বলা হয়েছে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এ দু’টি পদে হবে নির্বাচন। যার মধ্যে সভাপতি পদে মনোনয়ন মূল্য ৬০ হাজার টাকা ও সাধারন সম্পাদক পদে ৫০ হাজার টাকা ধার্য্য করা হয়েছে। চুড়ান্ত ভোটার তালিকা ঘোষনা করা হয়েছে গতকাল সোমবার, আজ সকলা ১০টা হতে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিতরণ করা হবে মনোনয়ন বিতরণ এবং আজ বিকেল ৪টা থেকে ৮টা পর্যনন্ত মনোনয়ন জমা নেয়া হবে। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা দেয়া হয়েছে আগামীকাল ১৪ জুন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। মনোনয়ন বাছাই এবং চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে এদিন বিকেল ৫টায়। এদিকে উল্লেখ্য যে একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক পদে মনোনয়ন গ্রহন করতে পারলেও শুধুমাত্র একটি পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার নিয়ম রাখা হয়েছে ঘোষিত তফসিলে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৭ জুন সকাল ১০টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে নির্বাচনের ভেন্যু এখনো চুড়ান্ত করা না হলেও গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজ প্রাঙ্গনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, সম্মেলনের কাউন্সিল কিভাবে সফলভাবে পালন করা যাবে তা নিয়ে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। এর ফলে জেলা বিএনপির সম্মেলনকে নিয়ে উজ্জ্বীবিত দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। সেই পাশাপাশি নেতাকর্মীরা বলছে সকল পদেই ভোটাভোটির মাধ্যমেই নেতা মূল্যায়ন করা হবে। সম্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরা যার যার মতো প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে চলছে দফায় দফায় নানা স্থানে বৈঠক।

জানা গেছে কখনো আংশিক, কখনো আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। ফলে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে হয়নি জেলা বিএনপি’র সম্মেলন। তার উপর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল লেগেই ছিলো।

দলীয় তথ্যমতে, ২০০৩ সালে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার। ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারবাদী হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম আলোচনায় থাকায় ২০০৯ সালের ২৪ শে নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি’র সর্বশেষ সম্মেলনে তাকে বাদ দেয়া হয়। সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র প্রয়াত কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধরণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। ফলে ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ না দেখায় সাড়ে ৩ বছর পর জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। নির্দেশনা ছিল ৩ মাসের মধ্যে থানা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এই আহ্বায়ক কমিটি সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। তবে, গিয়াসউদ্দিন ও খোকনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি তাদের সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে সম্মেলনের পূর্বে সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠন করে সেই অসাধ্য কাজটি অতি সহজেই সাধন করতে পেরেছেন।

এদিকে, আগামী ১৭ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সবকিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারলে রাজনীতির ইতিহাসে সারা বাংলাদেশের রোল মডেল হয়ে থাকবে এই সম্মেলন।

Back to top button