জেলা সভাপতি সেক্রেটারির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে নালিশ
সোনারগাঁ উপজেলার আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ। আলাপ আলোচনা ছাড়া ১৮ জনের নাম কর্তন করে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ কমিটি অনুমোদন দেওয়ায় সাংগঠনিকভাবে শিষ্টাচার বর্হিভূত করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। পূর্বে পাঠানো প্রস্তাবিত কমিটি বহাল রাখতে ১০ জুলাই কেন্দ্রে লিখিত আবেদন করেছেন সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ।
ওই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূইয়া, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক কায়সার হাসনাত।
আবেদনে বলা হয়, বিগত ৩ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রী-বার্ষিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের ৩ জনকে সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কাছে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে মোতাবেক আমরা তিন জন বসে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সকল নেতৃবৃন্দ, নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বৃন্দ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারন সম্পাদক গণের সহিত বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর গঠনতন্ত্র মোতাবেক সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নবীন প্রবীনদের সমন্বয়ে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করি এবং স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নিকট জমা প্রদান করি। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক আমাদের সাথে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়াই ১৮ জনের নাম কর্তন করে এবং তাদের পছন্দের নতুন ১৮ জন ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করে আমাদের কাছে জমা না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত ৪ জুলাই মধ্য রাত্রে প্রকাশ করে যাহা সাংগঠনিক ভাবে শিষ্টাচার বর্হিভূত। এ ধরনের অনৈতিক ভাবে নাম কর্তন, অন্তভূক্তি ও প্রকাশ সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ কে মর্মাহত করেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এই নগ্ন হস্তক্ষেপ, কমিটি প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে আর ও উল্লেখ করা হয় বিপুল পরিমান অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ১৮ জনের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত কমিটি কে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃনমূল এবং সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক বৃন্দ এই কমিটি কে সম্পূর্ন ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
অতএব, বিনীত প্রার্থনা এই যে, আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে রাজপথের আন্দোলনে যারা সক্রিয় অংশগ্রহন করার পরিক্ষীত নেতা কর্মী ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাদের দলীয় প্রার্থীর জয়ের জন্য উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবেন এবং তৃনমূল নেতা কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে উক্ত কমিটিকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাচ্ছি।
গত ৪ জুলাই রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহম্মদ শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করেন। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত কমিটি প্রকাশের পরই পদ বঞ্চিত নেতাসহ সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন বাদ পড়া ১৮ জনের মধ্যে জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাতের ছেলে সানজিত হাসনাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল হাই ভূঁইয়ার ছেলে আহসান হাবীব টিপু, মেঘনা শিল্পাঞ্চল শ্রমিক লীগের আহবায়ক তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম, সোনারগাঁ সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি রফিকুল হায়দার বাবু, সোনারগাঁ পৌরসভা আওয়ামীলীগ নেতা কবির হোসেন, মোশাররফ মেম্বার, আতাউর রহমান আক্তারসহ অনেকেই বাদ পড়েছেন। তাছাড়া প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রশিদ ভূইয়াকে পদ পরিবর্তন করে সদস্য করা হয়েছে ও শহিদুল্লাহ মিয়াকে পদবঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে জেলা আওয়ামীলীগের ব্যক্তিরা লাভবান হলেও দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কায়সার বলেন, যাচাই বাছাই করে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে একটি প্রস্তাবিত কমিটি জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের কাছে প্রেরণ করেছি। সেই কমিটি অনুমোদন দেওয়া কথা। জেলা আওয়ামীলীগ আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই তাদের প্যাডে একটি কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। তাদের কমিটি অনুমোদনে অনিয়ম হয়েছে। এ অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল বলেন, অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে নতুন পরীক্ষিত কিছু নেতাকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়নি। কেন্দ্রে অভিযোগ দিলে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।